• মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১০:০১ অপরাহ্ন

কুমিল্লায় বাণিজ্য মেলায় লটারির ফাঁদ, সর্বস্ব হারাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ

মো: মোবারক হোসেন / ১৮১ Time View
Update : শনিবার, ২৪ মে, ২০২৫

কুমিল্লায় কুটির শিল্প ও বাণিজ্য মেলায় লটারির নামে চলছে প্রকাশ্য জুয়া। প্রতিদিন পাঁচটি রঙের ২০ টাকার টিকিট বিক্রি হচ্ছে শহর ও গ্রামে, অলিগলি থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ, হাট-বাজার পর্যন্ত। ‘র‌্যাফেল ড্র’ নামের এই কার্যক্রমে প্রতিদিন প্রায় অর্ধকোটি টাকার টিকিট বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। পুরস্কার হিসেবে মোটরসাইকেল, ফ্রিজ, ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকারের লোভ দেখিয়ে সহজ-সরল মানুষকে আকৃষ্ট করা হচ্ছে।
মেলার বাইরে এই লটারির টিকিট বিক্রির কারণে সর্বস্ব হারাচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। রিকশাচালক, দিনমজুর ও বেকার তরুণরা প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ২০০ পর্যন্ত টিকিট কিনছেন। অনেকেই দিনের উপার্জনের বেশিরভাগ অংশ ব্যয় করছেন টিকিট কেনায়। রাত সাড়ে ১০টায় অনলাইনে লাইভ ড্র দেখতে বসেন শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ।

এতে পাঠ্যবই থেকে দূরে সরে যাচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা, পরিবার হারাচ্ছে আর্থিক সঞ্চয়।
টিকিট বিক্রেতারা জানিয়েছেন, প্রতিদিন ১২-১৫শ’ টাকার বিনিময়ে তারা কাজ করেন। একজন কর্মী দিনে ৮০০ থেকে ১ হাজার টিকিট বিক্রি করেন, যা মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি হচ্ছে।

শহরের রিকশাচালক আশরাফুল আলম জানান, প্রতিদিন ৩০টি করে টিকিট নিচ্ছি।

২৫ দিনেও কিছু জোটেনি। কিন্তু পুরস্কারের আশায় ছাড়তেও পারছি না। এক নারী অভিভাবক বলেন, ছেলে-মেয়ে রাত ১০টা বাজলেই বাইরে ছুটে যায় ড্র দেখতে। বাধা দিলে রেগে যায়।
কুমিল্লা কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ হুমায়ূন কবীর মাসউদ বলেন, চটকদার বিজ্ঞাপনে লোভ দেখিয়ে খেটে খাওয়া মানুষের সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে এই মেলা।
সন্ধ্যার পর শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পড়ছে আড্ডা ও অপকর্মে।
গণমাধ্যমকর্মী মাসুক আলতাফ চৌধুরী বলেন, মেলায় অনুমতি না নিয়েই প্রকাশ্যে লটারির নামে জুয়া চলছে। লাইভ সম্প্রচারে প্রতিরাতে ড্র হচ্ছে। অথচ প্রশাসন নীরব। প্রশাসনের উচিত অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া।

বিএনপির দক্ষিণ জেলা সদস্যসচিব আশিকুর রহমান ওয়াসিম বলেন, এই মেলাই নয়, দেশের সবখানে প্রশাসনের ব্যর্থতা চোখে পড়ছে। আমরা চাই কার্যকর প্রশাসন ও সঠিক নির্বাচন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব রাশেদুল হাসান জানান, নিম্ন আয়ের মানুষ তাদের ৬০-৭০ শতাংশ আয় টিকিটে ব্যয় করছে। এতে পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। আইন আছে, প্রয়োগ কোথায়?

লটারির দায়িত্বে থাকা মাহবুবের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
কুমিল্লা পুলিশ সুপার মো. নাজির আহমেদ খাঁন বলেন, বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানলাম। খোঁজ নিয়ে সত্যতা মিললে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার জানান, মেলার অনুমতি আমাদের কাছ থেকে নেয়া হয়নি। র‌্যাফেল ড্র অনৈতিক ও অন্যায্য। কেউ লিখিত অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


More News Of This Category
bdit.com.bd